Menu

Jadavpur University Alumni Association Hyderabad Chapter

(JUAAH)

Blog Search

চন্দনাদি – এক স্বপ্নসন্ধানী

ডঃ দেবোপম চক্রবর্তী

ওনার সঙ্গে কবে প্রথম কবে দেখা হল মনে নেই ।  শুধু মনে আছে উনি ছিলেন  IAS-এর ঘেরাটোপে, সকলের সম্ভ্রমের মাঝে, কখনও বা অকারণ স্তাবকদের আস্তরণে ।  তখন ওনাকে দেখেছি  Alumni President হিসেবে, দেখেছি ওনার ব্যক্তিত্বের ঝলসানি। ওনার আলোর স্নিগ্ধতাতে আসা হয়নি তখনও ।  এক অদ্ভুত ভয় অনেকের কথায় আর কাজে দেখে, ওনাকে বুঝতে সময় লেগে গেল আরও অনেকটা ।

আর যখন বুঝলাম, তখন এত দ্রুত উনি সত্যিকারের ‘দিদি’ হয়ে উঠলেন যে অনায়াসেই বলে ফেলতে পারতাম- “না চন্দনাদি, আপনার কবিতার চেয়ে গদ্য অনেক সুন্দর । ” মন দিয়ে শুনতেন ওনার কবিতার বিষয়ে আমার মতামত । তারপর স্মিত হেসে বলতেন –“ঠিক আছে এবার গদ্যই বেশি লিখব ।”   ওনার সাথে বোলপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে শিশুসুলভ আনন্দের সাথী হয়ে অনায়াসে বলতে পারতাম- “এদের জন্যই আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। তাই কথা শুনে বুঝে সুঝে খাওয়া দাওয়া করতে হবে । ”  উনি কোনও উত্তর দিতেন না, শুধু আকাশ ছাপিয়ে হাসতেন ।

চোখের সামনে ভোজবাজির মত দেখেছি কেমন করে একটা একটা করে গ্রামের শিশু আর মহিলাদের পড়াশোনা, হাতের কাজ, ছবি আঁকা, খেলাধুলার জন্য নিজের সমস্ত পেনশনের টাকা অনায়াসে বিলিয়ে দিতেন । কত মেয়ে যে তাঁর সাহচর্যে সুস্থ জীবনের আলো দেখেছেন তার হিসেব নেই । উনি খবর পেলেই ছুটে যেতেন, কথা বলতেন তাদের দাওয়ায় বসে ।  যখনই কোনও নূতন ভাবনা নিয়ে ওনার কাছে গেছি, ওনার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল, “ হ্যাঁ, এতো খুব ভাল হবে । চলো শুরু করা যাক । ”

উনি স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন, আকাশচারী স্বপ্নকে মাটির কাছাকাছি এনে স্বপ্নপূরনের কাণ্ডারি হতেন । আর এসবই মনে হত পালকের উড়ে যাবার মত চেষ্টাহীন, শব্দহীন ।

হায়দ্রাবাদের এমন কোনও সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংস্থা নেই যারা দিদির সাহচর্য পাননি । কত নামী ও অনামি কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পীদের কাছে উনি যে কত কাছের মানুষ ছিলেন- দেখেছি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ।  অথচ অবাক হয়ে যাই এই বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে ছিল না কোনও আত্মম্ভরিতা, আত্মপ্রচার । অবসরের পর উনি আর ব্যস্ত হয়ে পরেন মানুষের সেবায় । মানুষের ভালবাসা ওনাকে চেয়ারের জোরে আদায় করতে হয়নি, এসেছে এক স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ারের মত ।

তাঁর মৃত্যুর পর, এই সেদিন শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখে এলাম তাঁর স্বপ্ন নিয়ে জেগে ওঠা সেইসব মানুষের  ভালবাসার চোখের জল , স্বজন হারানোর বেদনা আর স্বপ্নপুরনের  প্রতিজ্ঞা । দিদি বলতেন, “আমি সবসময় বর্তমানে বাঁচি ।  সেতুর সামনে পৌঁছলেই ঠিক করব সেতু পেরোনোর উপায় । ”

সেই বর্তমানে দাঁড়িয়ে আমাদের অপরিমেয় ক্ষতিতে  সান্ত্বনা একটাই , উনি আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, রেখে গেছেন ফুলের মত শিশুদের আমাদের হাতে, ভবিষ্যতের কোনও এক সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় ।

(লেখক মাহিন্দ্রা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও মার্জিন ট্যু মেইনস্ট্রিমের জয়েন্ট সেক্রেটারি।)

Go Back



Comment