Menu

Jadavpur University Alumni Association Hyderabad Chapter

(JUAAH)

Blog Search

নাটকঃ চক্রব্যুহে আজও

একটি সমবেত প্রচেষ্টা

(এই প্রজন্মকে সবাই জানে জেন-ওয়াই বলে, এই যুগ নাকি জেট যুগ। জেটের গতিতে এগিয়ে চলছে সভ্যতা, ভেঙ্গে যাচ্ছে পুরোন ধ্যান ধারণা, আচার-বিচার, ঐতিহ্য। বদলাচ্ছে অনেক কিছুই, কিন্তু কতটা বদলেছে আমাদের রাজনীতি? রণনীতি? আধুনীকতার পর্দাটুকু সরালে, ঠিক কতটা দূর আজও বিস্তৃত আমাদের শিকড়? কতখানি গভীরে তার চলাচল? এপ্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কোথায় যেন আমাদের মহাকাব্য নির্ধারন করে চলেছে আমাদের গতিবিধি। সেই প্রতিশ্রুতি, প্রতিশোধ, লাঞ্ছনা, অবমাননা,ধর্মক্ষেত্রে নিজেকে অটল প্রমাণ করতে, আমরা সবাই জীবনের কুরুক্ষেত্রে নিঃশব্দ সংগ্রাম করে চলেছি। ‘মহাভারত’ আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে , মহাভারত সেই চিরকালীন সত্যের মত ভাস্বর যাকে তুলনা করা যায় “অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষা/ আর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন”।

আমাদের এই খোঁজ এবার তাই মহাভারতের চক্রব্যুহে ।  )

 

ইন্দ্রাশীষের ঘুম আসছিল না। বিছানায় শুয়ে থাকতেও ইচ্ছে করছে না। রাত বেশ গভীর, সে ব্যালকনিতে এসে বসল। শীতের মুখে হালকা হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে, আরাম কেদারায় শরীরটা মেলে দিয়ে সে চোখ বন্ধ করল। বিচ্ছিন্ন সব চিন্তাগুলো,না শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। হঠাত্ মনে হল কেউ যেন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চোখ মেলতেই, চমকে উঠল ইন্দ্রাশীষ.

ইন্দ্রাশীষঃ আবার আপনি?

কৃষ্ণের প্রবেশ

                                    

সেজেগুজে, হাতে মোহন বাঁশীটি নিয়ে দাঁড়িয়ে স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ। মিটিমিটি হাসছেন তার দিকে তাকিয়ে

ইন্দ্রাশীষঃ  আপনার মশাই ব্যাপারটা কি বলুন তো? যখন তখন এসে হাজির। আমি তো আপনাকে আজ স্মরণও করিনি

কৃষ্ণঃ  তাতে কি? হাতে কাজকম্ম নেই, বেড়িয়েছিলাম চারপাশের হাল হকিকত জানতে, দেখি তুমি ভারি চিন্তিত, ভাবলাম তোমার চিন্তা একটু লাঘব করে দিয়ে যাই।

ইন্দ্রাশীষঃ  আপনারতো শুধু ওই মহাভারতের ফান্ডা। যুগ পাল্টেছে মশাই, সমস্যাও পাল্টেছে, সবকিছু ওই ‘তথাস্তু’ বলে দিলেই মিটে গেল না।

কৃষ্ণঃ  আরে ‘যা নেই ভারতে,তা নেই ভারতে’শোননি?বলা যায়না আমার ফান্ডা কাজে লাগতেই পারে। তা শুনি কি সমস্যা?

ইন্দ্রাশীষঃ  শুনে কি করবেন?যুদ্ধ করার পরামর্শ দেবেন তো? আপনি আর কি পারেন। আমার এখন গৃহযুদ্ধের কোন ইচ্ছা নেই।

কৃষ্ণঃ  ওহ তবে সমস্যা এখন গৃহে। বেশ বলতে শুরু কর। দেখি কি পরামর্শ দেওয়া যায়। আমি এখন এখান থেকে নড়ছি না।

অগত্যা ইন্দ্রাশীষ শুরু করল।

ইন্দ্রাশীষঃ  ব্যবসাটা ঠিকঠাক চলছে না। বয়স হয়েছে তো, ছেলের হাতে অনেকটা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু ছেলে ঠিকঠাক সামলাতে পারছেনা। আবার আমি যা বলছি সেটাও শুনবে না। ম্যানেজমেন্ট পড়ে ওর মনে হচ্ছে যে ও যা করছে সব ঠিক। কিন্তু আমি জানি কিছুই হচ্ছে না। অভিজ্ঞতার অভাব।

শ্রী কৃষ্ণ মাথা নাড়লেন, ‘তা অভিজ্ঞ লোকের হাতেই সব কিছু ছাড়া উচিত ছিল’।

ইন্দ্রাশীষঃ  তাই তো চেয়েছিলাম, আমার ভাই, মার্কেটিং-এ কাজ করেছে সারাজীবন, ভাবলাম ওকে দেব

কৃষ্ণঃ  তো দিলে না কেন?

ইন্দ্রাশীষঃ  বৌ,জেদ ধরে বসল, ছেলেকে সর্বেসর্বা করতে হবে, ওর মাথার ওপর কাউকে বসান চলবে না।

কৃষ্ণঃ  অমনি তুমিও স্ত্রীর মন রাখতে গিয়ে ছেলেকে সব দিয়ে দিলে

শ্রী কৃষ্ণ মৃদু হাসলেন।

কৃষ্ণঃ  মহাভারতের রাজা শান্তনুকে মনে পড়ে ইন্দ্রাশীষ? তিনিও অনেকটা একইরকম কাজ করেছিলেন, তোমরা দুজনেই স্ত্রীর মন রাখতে যোগ্য ব্যক্তিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছ। 

                                                 

(সত্যবতী- শান্তনু- ভীষ্ম পর্ব)

 

শান্তনুঃ  কি ভাবছ সত্যবতী? আমি আজ বিবাহপ্রস্তাব নিয়ে তোমার পিতার সাথে দেখা করতে চাই,আজ কত আনন্দের দিন, কিন্তু তুমি আজ উদাস কেন?

সত্যবতীঃ  মহারাজ,আমার পিতার একটি ইচ্ছা আছে,আপনি যদি তা পূরণ করবেন কথা দেন,তাহলে আমিও এই বিবাহের জন্য প্রস্তুত

শান্তনুঃ  কি সেই ইচ্ছা?

সত্যবতীঃ  আমার পিতা চান, আমার আপনার সন্তানই হোক, হস্তিনাপুরের পরবর্তী রাজা

শান্তনুঃ  সে কি করে সম্ভব? উনি নিশ্চই জানেন,আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র দেবব্রত এই সিংহাসনের যোগ্য উত্তরাধিকারী

সত্যবতীঃ  জানেন,তবু এই তাঁর মনের ইচ্ছা। 

শান্তনুঃ  আমাকে কটাদিন ভাববার সময় দাও সত্যবতী

 

(শান্তনু একা বসে রয়েছেন, দেবব্রতর প্রবেশ)

 

দেবব্রতঃ  পিতা, আপনাকে গতকাল থেকে চিন্তিত দেখাচ্ছে,কিছু হয়েছে?

শান্তনুঃ  আমি সত্যবতীর কাছে বিবাহ প্রস্তাব রেখেছিলাম,কিন্তু তার পিতার একটি শর্ত আছে।

দেবব্রতঃ  কি সেই শর্ত?

শান্তনুঃ  তার পিতার একান্ত ইচ্ছা, সত্যবতী এবং আমার সন্তানই হোক হস্তিনাপুরের উত্তরাধিকারী।

দেবব্রতঃ  আপনি আমাকে একবার নিয়ে চলুন তাদের কাছে

 

(শান্তনু- দেবব্রত-সত্যবতী)

 

দেবব্রতঃ  দেবী,আমি আপনার পিতার ইচ্ছা সম্পর্কে অবগত। আমি আজ আপনাকে কথা দিচ্ছি, আপনার সন্তানই হবে হস্তিনাপুরের পরবর্তী রাজা

শান্তনুঃ  একি বলছ দেবব্রত? 

দেবব্রতঃ  হ্যাঁ পিতা,আমিও তাই চাই

সত্যবতীঃ  পুত্র, তোমার জয় হোক। কিন্তু তুমি অধিকার ছাড়লেও,তোমার সন্তানেরা যদি ভবিষ্যতে তাদের অধিকার দাবি করে?

দেবব্রতঃ  দেবী,আজ আমি আপনার এবং পিতার সামনে,সমস্ত দেব-দেবীকে সাক্ষী করে এই পণ করছি যে, আমি কোনদিন বিবাহ করব না,কোন নারীসঙ্গ ভোগ করব না।

শান্তনুঃ  একি কঠিন প্রতিজ্ঞা করলে পুত্র, ফিরিয়ে নাও এখনই

দেবব্রতঃ  না পিতা,তা আর সম্ভব নয়, ক্ষমা করবেন।

 

শান্তনুঃ  পুত্র, আমার সুখের জন্য তুমি এতখানি আত্মত্যাগ করলে? এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা করলে? আজ থেকে তোমার নাম হল ভীষ্ম। আমি তোমায় বর দিলাম মৃত্যু তোমাকে তার ইচ্ছামত ছুঁতে পারবে না।তুমি যখন চাইবে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পারবে। তোমার ইচ্ছামৃত্যু হবে। 

 মৃদু হাসল ইন্দ্রাশীষ।

ইন্দ্রাশীষঃ  যাকগে শুনলেন তো আমার কথা? এবারে যাই ঘুম পাচ্ছে

কৃষ্ণঃ  পালাচ্ছ? তোমার সমস্যা তো আরো গভীর,বল ইন্দ্রাশীষ বল,আমি তো চিরকাল সকলের সমস্যার কথা শুনে গেলাম, আজও,এখনও শুনতে চাইছি।

ইন্দ্রাশীষঃ   কি বলব? ছেলে চলছে নিজের তালে,এদিকে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে এল। আজ একমাসের ওপর সে নিজের ঘর থেকেই বেরোয় না। তার বক্তব্য শ্বশুরবাড়ির সাথে সে মানাতে পারছে না। তার স্বামী নাকি মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। কিছুই বুঝতে পারছি না

কৃষ্ণঃ  কিছুই বুঝতে পারছ না? আচ্ছা বলত ওকে তোমরা কোথায় বিয়ে দিয়েছিলে?

ইন্দ্রাশীষঃ  কেন ভাল ঘর।ছেলেটির বাবা আমারই মত বিজনেসম্যান

কৃষ্ণঃ  তা্ই, তোমার এবং ছেলেটির বাবার একই ব্যবসা?

 

ইন্দ্রাশীষ উত্তর দিতে গিয়েও পারলনা, এই ঠান্ডা হাওয়াতেও সে বেশ বুঝতে পারছে,সে ঘামছে। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে,গলা শুকিয়ে কাঠ। সে অসহায়ভাবে কৃষ্ণের দিকে তাকাল। কৃষ্ণের মুখে তখন সেই ভুবনভোলান হাসি। অথচ আজ এই হাসি দেখে বুকের ভিতরটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে ইন্দ্রাশীষের।

সে আমতা আমতা করে বলল

ইন্দ্রাশীষঃ  আমি,আমি আর কি করতাম বলুন? দিন রাত এক করে যে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি, তাকে এভাবে তো শেষ করে দেওয়া যায় না, তাই পর্ণার বিয়েটা আমি দিয়েছিলাম ওই ফ্যামিলিতে

কৃষ্ণঃ  মানে তোমার রাইভ্যাল কোম্পানির মালিকের ছেলের সাথে, তাই তো

ইন্দ্রাশীষঃ  হ্যাঁ,ভেবেছিলাম দুজনের মধ্যে আত্মীয়তা থাকলে আমার ব্যবসাটা বাঁচবে

কৃষ্ণঃ  এতে তোমার মেয়ে মানে পর্ণার মত ছিল?  

ইন্দ্রাশীষঃ   না

কৃষ্ণঃ  তাহলে আমি যদি বলি এই মুহুর্তে তোমার আর যুধিষ্ঠিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, পাশা খেলায় যুধিষ্ঠির তাঁর স্ত্রীকে বাজি রেখেছিলেন আর তুমি তোমার মেয়েকে। মনে পড়ে দ্রৌপদীর কি হয়েছিল?

  

মহাভারত- দ্রৌপদী, বস্ত্রহরণের পর

আমার কোন শোক নেই, আমার কোন বিষাদ নেই  

হে কুরুবৃদ্ধগণ, আপনাদের নীরবতায় আমার কোন ক্ষোভ নেই      

পিতামহ ভীষ্ম, ক্ষমা করবেন, আপনাকে প্রণতি জানাবার স্থিরতা আজ নেই

আর কর্ণ, তোমার জন্য ঘৃণাও বড় বেশি মনে হয়

আর হে আমার পঞ্চস্বামী, আর্যাবর্ত বিজয়ী বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন

নকুল,সহদেব আর আপনি ধর্মপুত্র?

আপনারা আমার কৃতজ্ঞ অভিবাদন গ্রহণ করুন

আমি সর্বজ্ঞা নই,যজ্ঞভূমের অগ্নি থেকে আমার জন্ম

ধর্মাধর্মের ক্ষুরধার পথ আমার অজানিত

আর্যপুত্র আপনার বিচার তাই আমার পক্ষে ধৃষ্টতা

আপনার কোন বিচলন নেই, আপনার ধর্ম আপনাকে রক্ষা করেছে বিকার থেকে

কৃতজ্ঞতা জানান সেই ধর্মকে      

 

ইন্দ্রাশীষ দুই হাতে মাথা ঢেকে বসে আছে, শ্রী কৃষ্ণ কাঁধে হাত রাখলেন।

ইন্দ্রাশীষঃ  পর্ণা ওদের সম্পর্কে আরও কিছু জেনেছে, আমাকে বলছে না, শুধু বলে ওরা মানুষ নয়, ওদের কাছে থেকে সে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করতে চায় না।  

কৃষ্ণঃ  আচ্ছা বলতে পার যুগে যুগে কেন মেয়েদের দ্রৌপদীর মত দ্যুতসভায় এসে দাঁড়াতে হবে, কেন বলতে হবে ...  

                                                    

মহাভারত-দ্রৌপদী

এই দ্যুতসভায় দাঁড়িয়ে আমি জানলাম                                                

নারী শুধু কয়েক প্রহরের বিলাসসঙ্গিনী

মণিময় হার,শত সহস্র তরুণী দাসী

দান্ত মাতঙ্গ আর গন্ধর্বপ্রেরিত অশ্বযোদ্ধা

আর আমি পান্ডপুত্র বধূ

এক পংক্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই অপেক্ষায়

পিতৃগৃহে যেমন দেখেছিলাম

আহিরিনীরা দূর গ্রাম থেকে নিয়ে আসে তাদের পসরা

আর তার উপর ঝুঁকে পড়ে লুব্ধ ক্রেতার দল

আমাকে,আমাদের ব্যবহার করার জন্য

তেমনই উন্মুখ হয়ে আছে যারা আমার পতির আত্মীয়

আর আমাকে? আমাদের বিলিয়ে দিচ্ছেন যারা?

তারা আমার পঞ্চস্বামী!!!

বিবাহের মঙ্গলসূত্র হাতে বেঁধে যারা একদিন

আমার উপর নিয়মসিদ্ধ করেছিলেন তাদের অধিকার

                      

ইন্দ্রাশীষ আর বসে থাকতে পারল না, সেও উঠে এল,কৃষ্ণের পাশে দাঁড়াল

ইন্দ্রাশীষঃ  আপনি সেদিন দ্রৌপদীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাকে বিবস্ত্রা হতে দেননি, আজ তাহলে দেরী করে এলেন কেন?

কৃষ্ণঃ  আমি দ্রৌপদীর অন্তরের আগুনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাবলে প্রতিবার আমাকেই আসতে হবে কেন বলতো? তোমাদের এযুগের কবি লিখে গেছেন ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার?’ অথচ তোমরাই তাদের বারবার পিছনে ঠেলে দিচ্ছ।

ইন্দ্রাশীষঃ  আমি নিজের হাতে ওর জীবন নষ্ট করেছি। ও একটি ছেলেকে ভালবাসত।

কৃষ্ণঃ  কে সে?

ইন্দ্রাশীষঃ  আমারই অফিসে কাজ করত। খুব বুদ্ধিমান আর কাজের ছেলে। নাম জিষ্ণু।

কৃষ্ণঃ  সে এখন কোথায়?

ইন্দ্রাশীষঃ   বিদেশে, নতুন চাকরি নিয়ে চলে গেছে

কৃষ্ণঃ  কবে? পর্নার বিয়ের পর?

ইন্দ্রাশীষঃ  না তার ছ’মাস আগে

কৃষ্ণঃ  কেন? তুমি বিয়ে দেবে না বলার পর?

 

ইন্দ্রাশীষ মুচকি হাসল

ইন্দ্রাশীষঃ  এতক্ষণ আপনি আমাকে শান্তনু,যুধিষ্ঠিরের সাথে তুলনা করেছেন, এবার আমি আপনাকে বলি, এখানে আমি দ্রোণাচার্য্য। একলব্যের কাছে গুরুদক্ষিণা চেয়ে নিয়েছিলাম’।

কৃষ্ণঃ  কিভাবে?

ইন্দ্রাশীষঃ  আমি খুব কষ্ট করে পড়াশুনা করেছি, দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে আমার ছোটবেলা। তাই বরাবর ইচ্ছে ছিল,কিছু গরীব মেধাবী ছেলেকে সাহায্য করব পড়াশুনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জিষ্ণু তাদের মধ্যে একজন। ওর সারাজীবনের পড়ার খরচ দিয়েছি আমি। ওকে নিজের কোম্পানীতে রেখে নিজে হাতে কাজ শিখিয়েছি। কিন্তু যখন বুঝলাম পর্ণার সাথে ওর বিয়েটা আমি একান্তই দিতে পারবনা, বিদেশে আমার একবন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে আমি ওর চাকরির ব্যবস্থা করলাম। তারপর বললাম এবার গুরুদক্ষিণা দেবার পালা। এই চাকরি ছেড়ে চলে যাও।   

মহাভারত- একলব্য-দ্রোণ- অর্জুন

দ্রোণঃ বৎস অর্জুন, তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?

অর্জুনঃ  প্রণাম গুরুদেব, আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হব। সত্যিই কি তাই?

দ্রোণঃ  অবশ্যই। কেন এই নিয়ে তোমার কোন সংশয় আছে?

অর্জুনঃ  আমি একটি বালককে দেখলাম, অসামান্য ধনুর্ধর, তার যোগ্যতা আমার থেকেও বেশি। তাই নয়, সে নিজেকে আপনার শিষ্য বলে পরিচয় দিল। 

দ্রোণঃ  আমার শিষ্য?সেকি আমি তো এমন কাউকে চিনি না। কোথায় আছে সে?আমায় নিয়ে চল অর্জুন

অর্জুনঃ  গুরুদেব ওই সেই বালক

দ্রোণঃ  হে বালক? কে তুমি?

একলব্যঃ  প্রণাম গুরুদেব। আমার নাম একলব্য, আমি নিশাদরাজের পুত্র।

দ্রোণঃ  কোথা থেকে শিখেছ তুমি ধনুর্বিদ্যা?

একলব্যঃ  গুরুদেব আমি নিম্নবর্ণের বলে, রাজকুমারদের সাথে একত্রে আপনার কাছে অস্ত্রশিক্ষা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তাই আমি আড়াল থেকে সব শিখেছি, এবং আপনার এই মৃন্ময় মূর্তি স্থাপনা করে তার পূজা করেছি

দ্রোণঃ  তোমার আনুগত্যে আমি অত্যন্ত খুশী বালক। তবে তুমি যখন আমাকে গুরু বলে মেনেছ, তাহলে এখনও সেই সময় এসেছে তোমার কাছে গুরুদক্ষিণা চাওয়ার

একলব্যঃ  এত পরম আনন্দের কথা গুরুদেব, বলুন কি চাই?

দ্রোণঃ  তোমার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি আমায় দাও একলব্য

একলব্যঃ  গুরুদেব এই যদি আপনার ইচ্ছা, তবে তাই হোক।        

শ্রী কৃষ্ণ গম্ভীর হয়ে গেলেন।

ইন্দ্রাশীষঃ  আপনি বলুন আমি এখন কি করব?

 

(পর্ণার প্রবেশ)

ইন্দ্রাশীষঃ  একি পর্ণা তুই?

পর্ণাঃ  হ্যাঁ বাবা আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি

ইন্দ্রাশীষঃ  আমায় ক্ষমা করে দে মা

পর্ণাঃ  বাবা তোমরা জান না ওদের আসল ব্যবসাটা কি,আমার স্বামীও তার এক বন্ধু একটা ফার্টিলিটি ক্লিনিক আর নার্সিংহোম চালায়। তার আড়ালে চলে অন্য ব্যবসা।

ইন্দ্রাশীষঃ   অবৈধ গর্ভপাত? ভ্রূণহত্যা?

পর্ণাঃ  না, সারোগেসি। ক্লায়েন্টরা সবাই বিদেশী। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ওরা এ ব্যবসায় নামায়, সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে তারা রাজিও হয়। আর বাকি টাকাটা এদের পকেটে যায়।

ইন্দ্রাশীষঃ  কিন্তু এটা ভাব যারা মা হতে সক্ষম নন, তাদের কাছে তো এটা পরম আশীর্বাদ

পর্ণাঃ  তা নয়, সন্তানের কোন খুঁত থাকলে ওরা তাকে আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়।আবার প্নেক্সময়ে মা নিজের সন্তানকে দিতে চায় না। দিলেও সন্তানের খোঁজে বারবার ফিরে আসে। তাদের বুকফাটা কান্না সহ্য করা যায়না। আমি আর ওই নরকে ফিরব না।

কৃষ্ণঃ  মায়ের সন্তানকে ছেড়ে যাওয়ার নজির বড় পুরোন পর্ণা                                                                                                                     

 

মহাভারত- কর্ণ-কুন্তী সংবাদ

 কর্ণ-   কেন তবে

        আমারে ফেলিয়া দিলে দূরে অগৌরবে

        কুলশীলমানহীন মাতৃনেত্রহীন 

        অন্ধ এ অজ্ঞাত বিশ্বে? কেন চিরদিন

        ভাসাইয়া দিলে মোরে অবজ্ঞার স্রোতে-

        কেন দিলে নির্বাসন ভ্রাতৃকুল হতে?

        রাখিলে বিচ্ছিন্ন করি অর্জুনে আমারে,

       তাই শিশুকাল হতে টানিছে দোঁহারে

       নিগূঢ় অদৃশ্যপাশ হিংসার আকারে

       দুর্নিবার আকর্ষণে। মাতঃ, নিরুত্তর?

       লজ্জা তব ভেদ করি অন্ধকার স্তর

       পরশ করিছে মোরে সর্বাঙ্গে নীরবে,

        মুদিয়া দিতেছে চক্ষু- থাক থাক তবে।

        কহিয়ো না কেন তুমি ত্যজিলে আমারে ।

        বিধির প্রথম দান এ বিশ্বসংসারে

        মাতৃস্নেহ, কেন সেই দেবতার ধন

        আপন সন্তান হতে করিলে হরণ,

        সে কথার দিয়ো না উত্তর। কহো মোরে ,

        আজি কেন ফিরাইতে আসিয়াছ ক্রোড়ে।

কুন্তী – হে বৎস,  ভর্তসনা তোর শতবজ্রসম

           বিদীর্ণ করিয়া দিক এ হৃদয় মম 

           শতখন্ড করি।  ত্যাগ করেছিনু তোরে,

           সেই অভিশাপে পঞ্চপুত্র বক্ষে ক’রে

           তবু মোর চিত্ত পুত্রহীন; তবু হায়,

           তোরই লাগি বিশ্ব মাঝে বাহু মোর ধায়,

           খুঁজিয়া বেড়ায় তোরে। বঞ্চিত যে ছেলে

           তার তরে চিত্ত মোর দীপ্ত দীপ জ্বেলে

           আপনারে দগ্ধ করি করিছে আরতি

           বিশ্বদেবতার। আমি আজি ভাগ্যবতী,

           পেয়েছি তোমার দেখা। যবে মুখে তোর

           একটি ফুটে নি বাণী, তখন কঠোর

           অপরাধ করিয়াছি- বৎস, সেই মুখে

           ক্ষমা কর কুমাতায়। সেই ক্ষমা বুকে

           ভর্তসনার চেয়ে তেজে জ্বালুক অনল-

            পাপ দগ্ধ ক’রে মোরে করুক নির্মল।

ইন্দ্রাশীষ কেঁদে ফেলল, ‘আপনি বলুন আমি কি করব? কি করলে আমি নিজের কাছে অন্তত জবাবদিহি করতে পারব?’

শ্রী কৃষ্ণ ইন্দ্রাশীষের মাথায় হাত রাখলেন। ‘ভেঙ্গে পড় না। সময়ের দুরন্ত চাকায় এমনি সব সামাজিক ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে মানুষ খুঁজে পায় সঠিক পথের সন্ধান। এভাবেই এক উন্নততর সমাজের স্বপ্ন দেখে মানুষ। উত্তর তোমাকে নিজেকে খুঁজতে হবে। কোনো দুর্বলতার কাছে নতি স্বীকার না করা, দুর্বলতা জয় করতে পারার নাম-ই মনুষ্য ধর্ম।

ওই দেখ ভোর হচ্ছে। আমি চলি এবার। 

 

মচ্চিত্ত সর্বদুর্গানি মৎপ্রসাদাৎ তরিস্যষি,

অথ চেৎ ত্বম অহংকারম ন শ্রোষ্যসি, বিনংষ্যসি

যদ্ অহংকারম আশ্রিত্য ন যোৎস্য ইতি

মন্যসে মিথ্যৈষ ব্যবসায়স্তে প্রকৃতি ত্বাম নিয়ক্ষতি।......

Go Back



Comment